জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুরা

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৫৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

শাহাদাত হোসেন

bald-man-with-shades_212762398

ঢাকা শহরের প্রায় অনেক গুলো রুটে চলাচল করে লেগুনা আর এইসব লেগুনার অনেক কর্মীর বয়স ১৮ বছরের কম। পরিবারের অসচ্ছলতা আর দারিদ্রতাকে কেন্দ্র করে এই শিশুগুলো আজ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। এখানে কোন কোন শিশু হেল্পার আবার কোন কোন শিশু ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। যার ফলে এই রুটে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা আর দুর্ঘটনায় পড়ার মধ্যে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি।

ঢাকা শহরে চলাচল করে প্রায় তিন’শ লেগুনা আর এই লেগুনা গুলোতে কাজ করছে প্রায় ছয় থেকে সাত’শ শ্রমিক। এদের মধ্যে একতৃতীয়াংশই হল শিশু। যে বয়সে স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা আর সেই সময় হত দারিদ্র শিশুগুলোর পারিবারিক টানা পরনে বাধ্য হয়ে এই ধরনের ঝুঁকি পূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

একটু ভুলের জন্য এই শিশুশ্রমিকদের দিতে হয় চরম মূল্য। কোন কোন জায়গায় এই শমিকদের ওস্তাদরা ইচ্ছে মত মারে আবার কেউ কেউ বেতন দেয় না। এভাবেই বলল ১৩ বছরের হেল্পার লিটন।

unnamed (2)

লিটন লেগুনায় কাজ করে দুই বছর ধরে আর লেগুনা দুর্ঘটনায় পড়েছে ৩ বার। একবার তো হাতটাই ভেঙ্গে গিয়েছিলো তার। লিটনের প্রতিদিনের সূর্য উঠে কষ্ট নিয়ে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে বড় সে।বাবা লেগুনা ড্রাইভার বাসায় টাকা দেয় না। লিটনের প্রতিদিনের আয় দুইশ আর মার একশ টাকা তা দিয়ে চলাতে হয় পুরো পরিবার। তুমি পড়তে পার? এই কথা বলতেই লিটন বলল নাম লিখতে পারি কিন্তু পড়তে পারি না। পড়তে অনেক ইচ্ছা করে কিন্তু পারিনা। ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পরছিলাম তার পর আর পড়তে পারি নাই।

একদিন তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড় ডাক্তার হবে কিন্তু আজ তার স্বপ্ন একজন বড় ড্রাইভার হবে। এই স্বপ্ন পরিবর্তনের আরেক রাজা জাকির। এখানকারই হেল্পার সে।

জাকিরের বয়স মাত্র ১২ বছর। ।জাকির মেধাবি ছাত্র। ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত একটানা ৩ বছর রোল ১ ছিল তার। স্বপ্নও ছিল অনেক বড় হবার কিন্তু দারিদ্রতার কাছে তার সব স্বপ্ন হার মেনেছে। বাবার আদর কি জানেনা  সে। বাবা মারা গেছে সেই ছোট বেলাই। মায়ের ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে যখন মা ছেলের খরচ চলেনা। তখন দু মুঠো ভাত আর থাকার জন্য কিছু টাকার যোগান দিতেই জাকিরের এত যুদ্ধ।

unnamed

জাকিরের মা জাকির কে পড়াতে চায় কিন্তু টাকা! টাকা পাবে কথায়? দু মাসের ঘর ভাড়া বাকি এখনও। জাকিরের মা চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘আমার ছেলে সকালে ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞেস করে। মা আমি কুনদিন স্কুলে জামু।’ আমি তখনও কোন উত্তর দিতে পারি না। জাকিরের ঘরে দুটো পাতিল, একটা জগ আর একটা মশারি ছাড়া কিছুই নেই। জাকির এখনও স্বপ্ন দেখে সে আবার একদিন স্কুলে যাবে। এভাবেই ঝরে পড়ছে  লিটন আর জাকিরের মত অনেক শিশু। অকালেই ভেঙ্গে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন। বাঁধছে না আর আশা।

শিশু শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে “সড়ক পরিবহন ও মালিক সমিতি” এর সভাপতি সুলতান সরকার এর সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি এই সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হয় নি।

এই শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার, এরাই আগামী দিনের স্বপ্ন। পৃথিবীর সব শিশু হোক নিরাপদ।  লিটন, জাকিরের মত শিশু শ্রমিকরা ফিরে পাবে তাদের স্বপ্ন। আমরা পাব বুদ্ধি দীপ্ত প্রজন্ম এই প্রত্যাশাই আমাদের।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G